লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ১৮ শতাংশ গাড়ি চলাচল করেছে। এ অর্থবছরে আয় হবে ৩৯ কোটি টাকা। ব্যয় হবে ২০৮ কোটি টাকা।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ বা টানেল দিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩৬৬টি গাড়ি কম চলাচল করেছে। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৯ জুলাই পর্যন্ত টানেল পার হয়েছে ২৪ লাখ ২৮ হাজার ৩১৫টি গাড়ি। এই সময়ে আসা-যাওয়ার কথা ছিল ১ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার ৬৮১টি গাড়ি। অর্থাৎ ২১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ১৮ শতাংশ গাড়ি চলেছে। টানেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
কর্ণফুলী টানেলের সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, ২০২০ সালে টানেল চালু হলে দিনে ২০ হাজার ৭১৯টি যানবাহন চলবে। টানেল চালু হয়েছে ২০২৩ সালের অক্টোবরে। পরে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা এই প্রক্ষেপণ কমিয়ে ২০২৪ সালে প্রতিদিন গড়ে ১৮ হাজার ৪৮৫টি গাড়ি চলার পূর্বাভাস দেয়। আর ২০২৫ সালে যানবাহন চলেছে ১৯ হাজার ৬৬৯টি। টানেল চালুর ২১ মাস পার হতে চললেও এখনো এক দিনের জন্যও পূর্বাভাস অনুযায়ী গাড়ি চলাচল করেনি।
টানেল দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গাড়ি চলাচল না করায় এটিকে শ্বেতহস্তী প্রকল্প বলছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। গত ২৮ জুন চট্টগ্রামে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, টানেল চালু হওয়ার পর এখন রক্ষণাবেক্ষণ খরচও উঠছে না। টানেল চালু রাখতে প্রতিদিন লোকসান দিতে হচ্ছে। নির্মাণের আগে পরিকল্পনা করা দরকার ছিল।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর টানেল পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘কর্ণফুলী টানেলের পাশ দিয়ে এলাম, সেখানে কোনো গাড়ি দেখলাম না। এটি একটি বাহাদুরি প্রকল্প। কিন্তু বাহাদুরি করার মতো অবস্থা আমাদের নেই।’
টানেল দিয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী কেন গাড়ি চলছে না, তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি টানেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলীরা। সেতু কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর চালু না হওয়া, আনোয়ারা প্রান্তে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গাড়ি চলাচল করছে না।
নির্মাণ ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার কর্ণফুলী নদীর নিচে এই টানেল নির্মাণ করেছিল। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা প্রান্তে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাজ শেষে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার টানেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, টানেল থেকে এখন পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা। প্রতিদিন গড়ে আয় হয়েছে ১০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। তবে টানেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে দৈনিক ব্যয় হয় ৩৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। দৈনিক আয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। দৈনিক ঘাটতি প্রায় ২৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। চালুর পর ব্যয় হয়েছে ২৫৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত লোকসান ১৯১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
প্রত্যাশা অনুযায়ী গাড়ি না চলায় টানেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) ১৬৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ঘাটতি হবে বলে মনে করছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের মতে, এই অর্থবছরে টানেল থেকে আয় হতে পারে ৩৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর ব্যয় হবে ২০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় এই টানেলকে ‘শোপিস’ আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, এই শোপিস তো বেশি দিন দেখতে আসবেন না মানুষ। টানেল দেখার জিনিস না।
সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে, টানেলের ভেতর দিয়ে সবচেয়ে বেশি চলাচল করছে হালকা যানবাহন (কার, জিপ, পিকআপ, মাইক্রোবাস)। এর পরিমাণ ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪০টি, যা মোট গাড়ির ৭৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
কর্ণফুলী টানেলের সুফল পেতে হলে.
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম বলেছেন, চালুর প্রথম পাঁচ বছর টানেল সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবহার হবে না। এটির পরিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য মিরসরাই শিল্পনগর থেকে আনোয়ারা-বাঁশখালী হয়ে পেকুয়া মাতারবাড়ী কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করতে হবে। এই এলাকাজুড়ে শিল্পায়ন, পর্যটন ও আবাসন এলাকা গড়ে উঠতে সময় লাগবে। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে ও মিরসরাই শিল্পাঞ্চল চালু হলে টানেলের ব্যবহার আরও বাড়বে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে এই টানেলের বিস্তৃত ব্যবহার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভূত উপকার সাধন করার সম্ভাবনা আছে। অবশ্য এটাও বলা প্রয়োজন, প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েক বছর টানেলটি একেবারে স্বল্প ব্যবহৃত থাকবে। তাই টানেলটির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যানবাহনের টোল থেকে উঠে আসবে না।
গত এক বছরে রক্ষণাবেক্ষণ খরচের এক-চতুর্থাংশও যানবাহনের টোল থেকে উঠে আসেনি। প্রায় ১৮ হাজার যানবাহন প্রতিদিন টানেল ব্যবহার করবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছিল। বাস্তবে ব্যবহার করছে মাত্র ৪ হাজার যানবাহন। সে জন্য জনগণের কাছে এই প্রকল্পকে অত্যন্ত ব্যয়বহুল ‘সাদা হাতি প্রকল্প’ মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
বলা হচ্ছে, টানেল প্রকল্পটি সাবেক হাসিনা সরকারের ‘প্রেস্টিজ প্রকল্প’ কিংবা দুর্নীতির খাই মেটানোর জন্য গৃহীত ও বাস্তবায়িত আরেকটি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প। বিশেষত ৪৫০ কোটি টাকায় আনোয়ারা প্রান্তে নির্মিত ‘সাত তারকা মানের রিসোর্ট’। এই প্রকল্প অপচয়ের প্রতীক হিসেবে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
টানেলটি নির্মাণের জন্য মোট ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধের বার্ষিক কিস্তি ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হিসেবে চেপে বসবে। প্রথম কয়েক বছর টানেলের টোলের আয় থেকে ঋণের বার্ষিক কিস্তির অর্থ পরিশোধ তো দূরের কথা, টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ সরকারি বাজেট থেকে বেশ কয়েক কোটি টাকা প্রতিবছর ভর্তুকি দিতে হবে।
ওপরের বিষয় বিবেচনায় নিলে দীর্ঘমেয়াদি সুফলের বিবেচনায় কর্ণফুলী টানেলের গুরুত্বকে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাঙ্গু নদের দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগর থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার বেড়ে যাচ্ছে এই ভৌগোলিক বাস্তবতার কারণে।
কর্ণফুলী টানেল এই অঞ্চলের উল্লেখিত সীমাবদ্ধতাগুলো চিরতরে দূর করে দিয়েছে। যথাযথ নগর–পরিকল্পনা গ্রহণ করলে কর্ণফুলী টানেল দীর্ঘ মেয়াদে চট্টগ্রাম নগরকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনস’–এ পরিণত করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। টানেল নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দ্রুত উন্নয়ন, আবাসন, পর্যটন ও শিল্পায়ন শুরু হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের কয়েকটি জেটি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে নির্মাণের সুযোগও সৃষ্টি হয়ে যাবে।
ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ রাজ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য বহুদিন ধরেই হাপিত্যেশ করছে। ইতিমধ্যে আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড স্থাপিত হয়ে গেছে। চীনের ইকোনমিক জোন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। টানেলের পার্শ্ববর্তী কর্ণফুলী সার কারখানা ও চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা টানেলের কারণে সরাসরি পরিবহন ব্যয় ও সময়সাশ্রয়ের মধ্য দিয়ে উপকৃত হচ্ছে।
আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকত একটি আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠছে। সব মিলিয়ে, আগামী সাত-আট বছর টানেলের সীমিত ব্যবহার ও হতাশাজনক আয়ের বিষয়টিকে একমাত্র বিষয় হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যৌক্তিক হবে না।
কর্ণফুলী টানেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যবহার নিশ্চিত হবে, যখন মিরসরাই শিল্পনগর থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল বরাবর কক্সবাজার পর্যন্ত প্রস্তাবিত ‘মেরিন ড্রাইভ’ সড়ক এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণ সম্পন্ন হবে। প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভটি মিরসরাই থেকে কর্ণফুলী টানেল পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক এবং টানেলের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চার লেনের সড়ক হিসেবে নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে বলে খবর দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে।
প্রকল্পটি মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি বিশাল আবাসন ও শিল্পায়ন এলাকা গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি করবে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মীয়মাণ গভীর সমুদ্রবন্দরের বহুলবিস্তৃত ও যথাযথ অর্থনৈতিক উপযোগিতা এবং ব্যয়সাশ্রয়–সংক্রান্ত উপকার পেতে হলে এই মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পটি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গড়ে তুলতেই হবে।
মেরিন ড্রাইভটি কর্ণফুলী টানেলকেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহারের পথকে সুগম করে দেবে। চট্টগ্রাম নগর থেকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরের পটিয়া ও আনোয়ারা হয়ে সাঙ্গু নদের দক্ষিণে অবস্থিত বাঁশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী ও কক্সবাজারের অন্যান্য এলাকায় চট্টগ্রাম নগর থেকে সড়কপথে যাতায়াতের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার হ্রাস করবে কর্ণফুলী টানেল হয়ে প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভ।
ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যাতায়াতকারী এতদঞ্চলের ট্রাফিক চট্টগ্রাম নগরে না ঢুকে সরাসরি নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতে পারছে টানেলের মাধ্যমে। যানবাহনগুলোর সময় ও খরচ বিপুলভাবে সাশ্রয় হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরের যানজট সমস্যারও উল্লেখযোগ্য সমাধান আসবে এর ফলে।
নির্মীয়মাণ এক্সপ্রেসওয়ে ও আউটার রিং রোডের নির্মাণ সম্পন্ন হলে ওগুলো ব্যবহার করে চট্টগ্রাম নগর থেকে এই অঞ্চলে যাতায়াতকারী ট্রাফিকও টানেল ব্যবহার করে প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। অপর দিকে টানেলের আয় বৃদ্ধির জন্য থ্রি–হুইলার ও মোটরসাইকেলকে টানেল ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
শুধু শিল্পায়ন অঞ্চল নয়, পুরো এলাকাকে একটি বিশ্বমানের ‘পর্যটন ও আবাসন জোন’ হিসেবে গড়ে তোলার যে সুযোগ কর্ণফুলী টানেল সৃষ্টি করেছে, সেটির গুরুত্বকেও খাটো করা সমীচীন হবে না। পরিকল্পিতভাবে এই এলাকায় পর্যটন কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হলে বিশ্বমানের আবাসিক ও বাণিজ্যিক নগরগুলো গড়ে উঠতে বিলম্ব হবে না।
আরও আকর্ষণীয় যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এই এলাকা ধারণ করছে, তা হলো সমুদ্র উপকূলে ভবিষ্যতে আরও অনেকগুলো বন্দর ও ‘আউটার অ্যাঙ্কোরেজ’ গড়ে তোলার সুযোগ। কয়েক বছরের মধ্যে সাঙ্গু নদের মোহনায় ও নিকটবর্তী সাগর উপকূলে আরেকটি বন্দর গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা এখনই শুরু করলে অসুবিধা কোথায়?
কর্ণফুলী টানেলকে যথাযথ ব্যবহার করা গেলে আগামী এক দশকের মধ্যে এই প্রকল্প দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনে দেবে। প্রথম কয়েক বছর ‘সাদা হাতি প্রকল্প’ কিংবা ‘অপ্রয়োজনীয় প্রেস্টিজ প্রকল্প’ মনে হলেও পদ্মা সেতুর মতো এই টানেলও দূরদর্শীভাবে ব্যবহারের সুযোগ আছে।
কয়েক দশক পরে হলেও উল্লিখিত এলাকাগুলোর অর্থনীতির প্রয়োজনে টানেলটি নির্মাণ করতেই হতো। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সব মেগা প্রজেক্টকে পুঁজি লুণ্ঠনের মওকা হিসেবে অপব্যবহার করায় টানেলের নির্মাণব্যয় হয়তো স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে। তবে এক দশকের লোকসান সত্ত্বেও পরবর্তী যুগ যুগ ধরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার জন্য টানেলটির অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।


Comments
Post a Comment